up

# মালদ্বীপের ঈদ উৎযাপন




নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মালদ্বীপের ইতিহাস ও ঐতিহ্য খুবই প্রাচীন। সংস্কৃত শব্দ দ্বীপমালা শব্দ থেকেই মালদ্বীপ নামটা এসেছে।  আবার কারও কারও মতে মালদ্বীপ হচ্ছে দ্বীপরাজ্য। কারও কারও ভাষায় এটি মহল দ্বীপ। মহল অর্থ প্রাসাদ। পৃথিবীর অন্যতম নয়নাভিরাম দেশটির ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রায় আড়াই হাজার বৎসর পূর্বে বর্তমান ভারতবর্ষের তামিলনাড়ু এলাকার আদিবাসী দ্রাবিড় সম্প্রদায়ের মৎসজীবি লোকেরা  মালদ্বীপে প্রথম বসতি স্থাপন করেন।দ্বীপপুঞ্জে প্রথমে আসা এই মৎস্যজীবিরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিল।1153 সালে দ্বীপগুলিতে একজন উত্তর আফ্রিকান মুসলিম ইসলাম প্রচার করেছিল।

#আরো পড়ুন https://www.prithibirpathe.com/2021/05/blog-post.html

https://www.prithibirpathe.com/2020/11/blog-post_30.html

https://www.prithibirpathe.com/2020/10/blog-post.html


ষোড়শ শতাব্দীর দিকে যখন উপনিবেশিক শক্তি ভারত মহাসাগরের বেশিরভাগ বাণিজ্য দখল করে নেয়, তখন,স্থানীয় রাজনীতিতে পর্তুগিজ, ডাচ এবং ফরাসিরা হস্তক্ষেপ করত। পরবর্তীতে এই অবস্থার শেষ হয়েছিল যখন ১৯ শতকে মালদ্বীপ ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়েছিল এবং মালদ্বীপের শাসকদের স্বশাসনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।মালদ্বীপ ২৬ জুলাই, ১৯৬৫ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। 


ইসলাম হল মালদ্বীপের রাষ্ট্রধর্ম, এবং 2008 সালে সংবিধানের একটি সংশোধনের মাধ্যমে নাগরিকদের ইসলামী আইনের তাৎপর্য স্পষ্ট করা হয়। মালদ্বীপের সকল আইনের ভিত্তি ইসলাম।  মালদ্বীপে ইসলামের কোনো নীতির বিপরীত কোনো আইন প্রণয়ন করা হয় না।এখানে রমজানের মাসে, ক্যাফে এবং রেস্তোরাঁগুলি দিনের বেলা বন্ধ থাকে এবং কাজের সময় সীমিত থাকে। মালদ্বীপে অমুসলিমদের দ্বারা ধর্মান্তরিত করা, ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মের অনুসারীদের প্রকাশ্য উপাসনা নিষিদ্ধ। এককথায় মালদ্বীপের সরকার ও সমাজ কঠোর ভাবে ইসলামী নীতি ও মূল্যবোধ অনুসরণ করে ও সংরক্ষণ করে মালদ্বীপবাসীরা বিশ্বাস করে যে একটি একক ধর্ম বজায় রাখা গেলে জাতীয় পরিচয় রক্ষা করা যায় এবং দেশে সম্প্রীতি থাকে।



সমুদ্র কন্যা মালদ্বীপে আমি বেড়াতে গিয়েছিলাম ঈদের ছুটিতে।আমাদের মূল গন্তব্য ছিল প্যারাডাইস আইল্যান্ড।যাকে মানবসৃষ্ট হেভেন বললে ভুল হবে না।সেই মানবসৃষ্ট হেভেন গিয়ে সাগরের পানির রঙের বিভাজন দেখে আমি মন্ত্রমুগ্ধ।কোথাও সবুজাভ, কোথাও গাড় নীল,আকাশী, ফিরোজা কোথাও।সাগরের নীল জলে অবগাহন শেষে তিনদিন পর হুলেমালের ফিরে এসেছিলাম।



হুলহুমালে দ্বীপ এয়ারপোর্ট থেকে ১৫/২০মিনিটের রাস্তা। রাস্তার দুপাশে ছিল সমুদ্রের নীলাভ জলের রাজত্ব। সাগরের মিষ্টি বাতাস আর ঢেউের গর্জন যেন আমাকে কানে এসে ফিসফিসিয়ে আগমনী অভিনন্দন জানাচ্ছিল।



আমি মালদ্বীপের প্যারাডাইস আইল্যান্ড থেকে যখন হুলেমালে দ্বীপে পৌচ্ছাই তখন কোরবানি ঈদের দিনের মধ্য দুপর।আমাদের গাড়ী হোটেলে পৌঁছানোর আগেই বীচের পাড়ে আনন্দোৎসব দেখে নেমে পড়লাম।কাছে গিয়ে দেখি, সৈকত জুড়ে বাজছে গান। দলে দলে ভাগ হয়ে ছেলেমেয়েরা রং খেলছে।হিন্দুদের হোলি উৎসবের মতো।রং দেয়ার জন্য তারা খেলনা গান ব্যবহার করেছে।কেউ কেউ পানি খেলছে।আরেক দল বড় বড় সাউন্ড বক্সে গান চালিয়ে নাচছিল। পাতা দিয়ে বানানো একটা ঘরকে ঘিরে।নাচের স্টাইল অনেকটা আদিবাসী নৃত্যের মতো।


বিশ্বের ১০০ভাগ মুসলিম জনসংখ্যার তিনটি দেশের মধ্যে মালদ্বীপ একটি। বাকী দুইটি সোমালিয়া ও সৌদি আরব।সম্পূর্ণ মুসলিম সংস্কৃতির অনুসারী হয়েও, মালদ্বীপে পশু কোরবানীর প্রচলন নেই এবং কোরবানির মত স্পর্শকাতর এমন একটি ধর্মীয় অধিকার নিয়েও এদের কোনো উচ্চবাচ্য নেই।কেউ কেউ ভাবতে পারেন ক্রয় ক্ষমতার বিষয়।কিন্তু তাদের জীবনমান আমাদের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়।আমাকে বেশ অবাক করেছে।তবে এককথায় বিশুদ্ধ আনন্দে....


মালদ্বীপবাসীর এমন ঈদ উদযাপন দেখে, তাদের ধর্মচর্চা নিয়ে সন্দেহ করার অবকাশ নেই।মালদ্বীপের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি শুধু মালদ্বীপের বৃহত্তম নয়,এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ মসজিদ। মসজিদটি ৫০০০ এর অধিক লোক ধারণ করতে পারে।


মালদ্বীপ সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য:
1. মালদ্বীপ পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু দেশ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মালদ্বীপের গড় উচ্চতা মাত্র দেড় মিটার। 
2. ১১৯২টি দ্বীপ  নিয়ে এই রাষ্ট্রটি গঠিত ভারত মহাসাগরের বুকে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর প্রায় ৯০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত।
3. সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো সমগ্র মালদ্বীপের আয়তন এর ৯৯ ভাগই জল। এদেশের স্থলভাগের পরিমাণ মাত্র ১৯৮ বর্গকিলোমিটার। 
4. মালদ্বীপের রাজধানী শহর মালে। মালে মালদ্বীপ এর সবচেয়ে জনবহুল এবং পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ একটি শহর। মাত্র ৯ বর্গকিলোমিটারের এই শহরে প্রায় দেড় লক্ষ লোক বসবাস করে। 
5. মালদ্বীপে প্রথম সমুদ্রগর্ভে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।পৃথিবীর কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন কমানোর আহ্বান জানিয়ে একটি নথিতে স্বাক্ষর অনুষ্ঠান করা হয় 20 ফুট পানির নিচে ডুবে 2009 সালে।
7. মালদ্বীপের জাতীয় গাছ নারকেল গাছ।
8. মালদ্বীপের পতাকার সবুজকে শান্তি এবং নারকেল গাছের প্রতীক ধরা হয়।
9. মালদ্বীপ উচ্চতার দিক থেকে বিশ্বের সর্বনিম্ন দেশ।  ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে দেশটি তলিয়ে যাওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।  
10. মালদ্বীপ শুধু দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুদ্রতম দেশই নয়, এটি সমগ্র বিশ্বের ক্ষুদ্রতম মুসলিম দেশ।
11. সাগর জলে বিচ্ছিন্ন একদ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপের ব্যবধান যেমন কাছে আছে,তেমনি অনেক দূরেও আছে।এমনকি ১০০ কি:মি: দূরত্বেও আছে। 
12. মালদ্বীপে রিসোর্টের বাইরে অ্যালকোহল সেবন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।এখানে টুরিস্টদের অ্যালকোহল আনা, বহন নিষিদ্ধ।
13.পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নতমানের টুনা মাছ পাওয়া যায় বলে,মালদ্বীপকে টুনা কন্যাও বলে থাকেন অনেকে।






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ads Inside every post