হংকংয়ে মিশ্র সংস্কৃতি বিদ্যমান।এখানে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য উভয় ধরনের সংস্কৃতির উৎসবগুলি পালন করা হয়, যেমন চীনা চান্দ্রনববর্ষ এবং বড়দিনের সাথে দীপাবলিও পালিত হয়।হংকংয়ের জনসাধারণ সাধারণত ইংরেজি ও ম্যান্ডারিন উভয় ভাষাতেই কথা বলে। সাংস্কৃতিক ও বিনোদন বৈচিত্র্যের কারনে মানুষের কাছে হংকং সবসময় আকর্ষণীয়।তাই কোন ভ্রমণবিলাসী মানুষহংকং ভ্রমণের সুযোগ মিস করতে চায় না, হোক সেটা ট্রানজিট টাইমের 28 বা 72 ঘণ্টা, অথবা কোন ব্যবসায়িক বা প্রশাসনিকমিটিং।আর ভিসা নিয়ে ট্যুর প্ল্যান করে হলে তো কথাই নেই।
হংকং এর দর্শনীয় স্থানগুলো হলো:
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম ওসেনেরিয়াম এটি। সহজ ভাষায় বললে, এই থিম পার্কে সামুদ্রিক প্রাণীর বিশাল সংগ্রহ। ৮ লাখ ৭০ হাজার বর্গ মিটারেরও বেশি জুড়ে গড়ে উঠেছে এই পার্কটি। অ্যাকুরিয়ামটি এমন আকর্ষণীয় ভাবে সাজানো হয়েছে যে এটি শুধু শিশুদের নয় বড়দেরও বিনোদনের চাহিদা মিটাতে সক্ষম।দারুণ এই থিম পার্কে টুরিস্টরা সমুদ্রের বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও জলজ উদ্ভিদ দেখতে পায়। ইচ্ছে করলে ডাইভিংও করা যায়।২০০৬ সালের ফোর্বস ম্যাগাজিনের জরিপে এই অ্যাকুরিয়ামকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় দশটি থিম পার্কের একটি হিসেবে নির্বাচিত করে।এখানের বিনোদন ব্যয় হংকং এর অন্যান্য স্থানের মতো বেশী।৩ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের টিকিটের দাম ১৬০ হংকং ডলার; অন্যদিকে ১২ বছরের চেয়ে বেশি বয়সীদের জন্য ৩২০হংকং ডলার।
হংকং হেরিটেজ মিউজিয়াম
এই জাদুঘরটি হংকং এর ইতিহাস,শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করে।যা যে কোন টুরিস্টের কাছে আকর্ষণী বিষয়।এখানে চীনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট পুতুল দিয়ে চিত্রিত করা হয়।এছাড়াও এখানে নতুন টেরিটরি সম্পর্কে বড় প্রদর্শনী এবং পারফরম্যান্সের জন্য একটি অপেরা হাউস রয়েছে। এর পাশেই আছে নান্দনিক ভাবে গোছানো 'শা টিন' পার্ক।'শিং মুন' নদীও মিউজিয়ামথেকে কাছেই।এটা টুরিস্টদের জন্য বাড়তি পাওয়া।নদী আর পার্ক জাদুঘরকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে! ঠিকানা-1 man lam road, sha tin, new territory. মিউজিয়ামটি প্রতিদিন খোলা থাকে।
হেরিটেজ মিউজিয়ামের রাস্তার ঠিক নিচে, এই মন্দিরটি প্রাচীন চীনের দক্ষিণী রাজবংশের (1127-1279) সময়কার একজন সেনাপতি চে কুংকে উৎসর্গ করা হয়েছে। এখানকার মন্দির কমপ্লেক্স সবসময় লোকারণ্য থাকে।তাই যাদের ভিড়ের পছন্দ নয়, তারা বিষয়টা মাথায় রেখে মন্দিরে যাবেন।তবে ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য এবং জটিল ভাস্কর্যগুলি টুরিস্টকে যে কোন কষ্টকে তুচ্ছ করেদিবে।আর যারা হেরিটেজ মিউজিয়াম দেখতে যায়, তাদের এই মন্দির মিস করা বোকামো হবে আমার মতে।
ঠিকানা-চে কুং মিউ রোড।প্রতিদিন সকাল 7 টা থেকে 6 টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
হংকং মিউজিয়াম অফ আর্ট
এই জাদুঘরের বিশেষত্ব হলো এখানে চীনা সিরামিক, টেরা কোটা, গন্ডারের শিং এবং চীনা চিত্রকর্মের পাশাপাশি হংকংয়ের শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শন করা হয়। এটি আর্ট মিউজিয়ামের অংশ।
ঠিকানা-Tsim Sha Tsui, Hong Kong. মিউজিয়ামটি প্রতিদিন সকাল 9 টা থেকে 6 টা পর্যন্ত খোলা থাকে।(শনিবার ছাড়া)
পিক ট্রাম-
এই ট্রামটি 1,700 ফুট উচ্চতায়, হংকং দ্বীপের বৃহত্তম পর্বত শিখরের শীর্ষে নিয়ে যায় টুরিস্টকে। যেখান থেকে টুরিস্ট ভিক্টোরিয়া হারবার, কাউলুন এবং আশেপাশের পাহাড়গুলির 180-ডিগ্রী দর্শনীয় অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করতে পারে।বলা যায় পুরো সিটিরসেরা ভিউ।
ঠিকানা-1 লুগার্ড রোড, জনপ্রতি 52 হংকং ডলার।স্কাই টেরেসে প্রবেশসহ হলে জনপ্রতি 99 হংকং ডলার।
ল্যান কোয়াই ফং-
নাইট লাইফ বা পার্টির জন্য চমৎকার এক জায়গা।রাস্তার দুই ধারে সারি সারি রেস্টুরেন্ট,বার, সিসাক্লাব, নাইটক্লাব, পাব আছে।বলা যায় এডাল এন্টারটেইনমেন্টের পুরো আয়োজন আছে এখানে।তাই এই জায়গাকে সেন্ট্রাল হংকংয়েরপার্টি সেন্টার বলা হয়।সন্ধ্যার পরো ধীরেধীরে মানুষ আসতে থাকে, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যস্ত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।এখানকার রাত গুলো বন্য - রাস্তায় অনেক ভিড় থাকে,মানুষজন খুব মাতাল থাকে।তাই যারা কনজারভেটিভ তারা না যাওয়াই ভালো।তবে যদি কেউ হংকংয়ের বন্য দিক দেখতে চায়, এটি সঠিক জায়গা।
ডিজনিল্যান্ড-
পারিবারিক ভ্রমণে হংকং গেলে বা ডিজনিল্যান্ডে না গেলে হংকং ভ্রমণই বৃথা😂।মিকি মাউসের সাথে আড্ডা না দিয়ে এবংসমুদ্রের প্রাণীদের সাথে করমর্দন না করে কোন বাচ্চা হংকং ত্যাগ করতে চাইবে বলে মনে হয় না। এখানে চীনা কার্টুন চরিত্র এবংপশ্চিমা কার্টুন চরিত্রের সমাহার দেখা যায়। এ ছাড়া, এখানে রূপকথার বিশ্ব চলচ্চিত্রের বিস্ময়কর আনন্দ উপভোগ করা যায়।বিভিন্ন ধরনের ডিজনি চরিত্র যে কোনো সময় টুরিস্টদের সামনে এসে তাদের চমকে দেয়। যা শিশুদের বিস্মৃত করে।এখানে দু’রকম টিকিট রয়েছে।এক দিনের টিকেটের দাম এবং দু’দিনের টিকেটের দাম ভিন্ন।এক দিনের টিকিট: জনপ্রতি ৪৫০ হংকংডলার।তবে ৩-১১ বছরের শিশুর জন্য ৩২০ হংকং ডলার এবং ৬৫ বছর বয়সীদের জন্য ১শ’ হংকং ডলার। দু’দিনের টিকিট: জনপ্রতি ৫৮৫ হংকং ডলার, শিশু ৪১৫ এবং প্রবীণ ১৭০ হংকং ডলার।
কোনো স্থানকে বুঝতে হলে আগে তার অতীত বুঝতে হবে। এই যাদুঘরটি টুরিস্টকে হংকং এর দীর্ঘ এবং জটিল অতীতের একটি চমৎকার ওভারভিউ প্রদান করে। এই অঞ্চলের প্রত্নতত্ত্ব, সামাজিক ইতিহাস, জাতিতত্ত্ব এবং প্রাকৃতিক ইতিহাস সম্পর্কিত প্রদর্শনী হয়।মিউজিয়ামটি বড়, তাই দেখতে প্রায় 2-4 ঘন্টা সময় লাগে।জনপ্রতি টিকেট 10 হংকং ডলার। (বুধবার বিনামূল্যে)
হংকং দ্বীপের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত কজওয়ে বে। হংকং শহরের কেনাকাটার স্বর্গ বলা যায়।পর্যটক এবং শহরবাসীর কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা।এখানে অনেক শপিং মল আছে।সব ধরনের ক্রেতার চাহিদা এবং ক্রয় ক্ষমতার বিষয় মাথায় রেখে এইশপিং এলাকা সাজানো। এখানে জাপানি বিনিয়োগে গড়ে ওঠা অনেক ডিপার্টমেন্টাল স্টোর আছে।
পুরো হংকংই ‘কেনাকাটার স্বর্গ’। সবচেয়ে কম খরচের বিখ্যাত ব্র্যান্ডের ফ্যাশনেবল পোশাক, পারফিউম,ঘড়ি ইত্যাদি এখানে পাওয়া যায়। চীনের মূল-অংশের চেয়ে এখানে জিনিসপত্রের দাম কম।
ভিক্টোরিয়া পার্ক-
ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে ভিক্টোরিয়া পোতাশ্রয়, কাউলুন উপদ্বীপ ও হংকং শহরের চমৎকার দৃশ্য দেখা যায়। বিশেষ করে সন্ধ্যায় যখন হংকং হাজারো রঙিন বাতিতে সাজে তখন এই পার্ক থেকে সেই দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য দেখার মতো।এখানে বিশেষ ট্রাম চাড়ে, যাতে করে ঘুরে ঘুরে শহরের চারপাশ দেখা যায়। টিকিট জনপ্রতি ৫৩ হংকং ডলার এবং শিশু ও প্রবীণদের জন্য ২৪ ও ৩১ হংকংডলার।
মাদাম তুসোর মোমের জাদুঘর-
বিশ্বের বিখ্যাত মানুষদের মোমের তৈরি মূর্তি আছে এই জাদুঘরে।যদিও এখন আর এটি বিশেষ কিছু নয়। অনেক দেশেই এখনএই ধরনের জাদুঘর দেখা যায়। তারপরো অনেকে আছে যাদের কাছে বিষয়টা নতুন, তারা মূর্তিগুলো দেখলে অবাক হবে।মনেহবে, সত্যি মানুষই দাঁড়িয়ে আছে। এখানে চীনের সাবেক প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও, বাস্কেটবল তারকা ইয়াও মিং ও হংকং তারকা অ্যান্ডি লাউ সহ অনেক বিখ্যাত মানুষের মোমের মূর্তি আছে।টিকেট জনপ্রতি ২২৫ হংকং ডলার এবং65 বয়সী ও শিশুদের জন্য১৫৫ হংকং ডলার।
তারকা এভিনিউ বা এভিনিউ অব স্টারস্-
হংকংয়ের তারকা এভিনিউ-এ ৭৩টি বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ফলক আছে।তারকা এভিনিউয়ে হাঁটার সময় হংকংয়ের বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া পোতাশ্রয়ের অপূর্ব দৃশ্য টুরিস্টদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ।এ ছাড়া এখানকার স্থাপত্য নিদর্শনও দৃষ্টিনন্দন।আছে মাল্টিমিডিয়া সংগীত লাইট সিম্ফনি উপভোগের সুযোগ।টুরিস্টরা সাধারণত এ সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায় না।
হংকং বিজ্ঞান জাদুঘর টুরিস্টদের কাছে একটি দর্শনীয় স্থান। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয়।এখানে কম্পিউটার, যন্ত্রমানব, জ্বালানিসম্পদ, টেলিযোগাযোগ ও পরিবহন ইত্যাদি খাতের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত প্রদর্শিত হচ্ছে। টিকিট জনপ্রতি ২৫হংকং ডলার।শিশু,ছাত্র, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণদের জন্য ১২.৫ হংকং ডলার।২০জন বা তার বেশি গ্রুপ টিকেটে জনপ্রতি ১৭.৫ হংকংডলার।
সেতুটি হংকংয়ের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শহরের মূল সড়ককে সংযুক্ত করে।এই সেতুর স্থাপত্যশৈলী বিশ্ব পর্যায়ের।এটিহংকংয়ের প্রতীক।সমুদ্র থেকে ৬০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত সেতুটির দৈর্ঘ্য ২.২ কিলোমিটার।সেতুতে ব্যবহৃত ঝুলন্ত ইস্পাতের রশির মোট দৈর্ঘ্য ১ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার।এটিকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা ঝুলন্ত সেতু।
হংকংয়ের অন্যতম আকর্ষণীয় একটি স্থান।প্রতি বছরের বসন্ত উৎসব চলাকালে চীনা ফুলের বৃহত্তম প্রদর্শনীর আয়োজন করাহয় এখানে। হংকংয়ের বিখ্যাত কনভেনশন অ্যান্ড এক্সিবিশন সেন্টার এখানে।
খাবার -
যে কোন টুরিস্টের কাছে ভ্রমণের একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ফুড।সেদিক থেকেও হংকং বেশ রিচ।এখানে বেশ কয়েক ধরনের কুজিন দেখা যায়। এখানকার রন্ধনশৈলীতে প্রধানত ক্যান্টনিজ, ব্রিটিশ, পশ্চিমা, অ-ক্যান্টনিজ, জাপান ও দক্ষিণ পূর্ব এশীয় রান্নার প্রভাব দেখা যায়।এর কারন হলো দীর্ঘ ব্রিটিশ শাসনের ইতিহাস এবং বাণিজ্যিক প্রসারের কারনে বিভিন্ন দেশের মানুষের আগমন।সবচেয়ে ভালো বিষয় হলো এখানের দামী রেস্তোরাঁ থেকে ফুটপাথের দোকান, সব জায়গার খাবারেই বৈচিত্র্য আছে এবংমান নিয়ন্ত্রণ করা হয়।তাই টুরিস্টরা বাজেট মত রেস্টুরেন্ট পছন্দ করতে সমস্যা হয় না।
0 মন্তব্যসমূহ