আমাদের গাড়ীটা ঢাকা সিলেট রোডের শ্রীমঙ্গল অংশে ঢোকার পর ড্রাইভারকে গাড়ীর গতি কমিয়ে দিতে বলি।এতক্ষণের বোরিং রাস্তার বিরক্তি নিমিষে উধাও।আমার কাছে চা বাগানের ভিতরের এই রাস্তাকে বাংলাদেশের সেরা রাস্তা মনে হয়।কেউ কেউ বান্দরবন বা রাঙামাটি ভোটে এগিয়ে রাখবে জানি, কিন্তু মনে হয় সেখানে দুর্ঘটনা ঝুঁকি থাকায় সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করা যায় না বা দাঁড়ানো যায় না খানিকক্ষণের প্রশান্তির জন্য।যা এখানে সম্ভব।যত দূর চোখ যায় কেবল সবুজের হাতছানি।নীল আকাশের নিচে যেন সবুজ গালিচা পেতে আছে সজীব প্রকৃতি। ছোট ছোট পাহাড়, টিলা আর দিগন্ত বিস্তৃত চা-বাগান, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ।শুধু সবুজ আর সবুজ। মাঝে মাঝে টিলা বেষ্টিত ছোট ছোট জনপদ। প্রকৃতির সকল সৌন্দর্যের সম্মিলন যেন এখানে।এমন অন্তহীন সৌন্দর্যে একাকার প্রকৃতির প্রেমে না পড়ার মতো কোন হৃদয়হীন এই ধরাধামে আছে বলে মনে হয় না।
দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির সবুজ রংয়ের নয়নাভিরাম এই চারণভূমির রূপ-লাবণ্যের অপূর্ব সৌন্দর্যে অবগাহনের আবেশেই বাকী পথটুকু যেন মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেল।পৌঁছে গেলাম আমাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য, ঢাকা থেকে প্রায় 200 কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সিলেট অঞ্চলের মৌলভীবাজার জেলার 'দুসাই রিসোর্টে'।
উঁচু-নিচু টিলায় ঘেরা সবুজ প্রকৃতি আর নীল আকাশের সাথে যেন মিতালি করেই দাঁড়িয়ে আছে দুসাই রিসোর্ট। চারপাশে সবুজের সমারোহ।নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য আর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সাথে দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য শৈলীর সমন্বয়ে চায়ের দেশ চিরসবুজ শ্রীমঙ্গলে গড়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম পাঁচতারকা মানের মায়াময় রিসোর্ট। স্থাপত্য এবং অভ্যন্তরীণ ডিজাইনের জন্য তিনটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়া রিসোর্টটি চা বাগানের 1,386 ডেসিমেল জমি নিয়ে 2014 সালে নির্মিত।
সবুজ চাঁদরে ঢাকা শীতল প্রকৃতির এই রিসোর্ট ভ্রমণ বিলাসী মানুষকে এতটা বিমোহিত করে যে,মানুষ খুব সহজেই এর প্রেমে পড়ে যায়।প্রকৃতি যেন এখানে নিজের সব রঙ ঢেলে দিয়েছে।আয়েশি টুরিস্টদের জন্য অত্যাধুনিক সমস্ত সুবিধার সাথে দুর্দান্ত সবুজের বিলাসিতাকে একত্রিত করে বিভিন্ন ক্যাটাগরির 85টি ভিলা সাজানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য সচেতন অতিথিদের জন্য আছে আধুনিক ব্যায়ামাগার।তবে আমার স্বাস্থ্য সচেতনদের জন্য অবশ্য রিসোর্টের অভ্যন্তরীণ রাস্তা এবং ওয়াকওয়েগুলিই যথেষ্ট।যা কমপ্লেক্সকে ঘিরে পুরো এলাকাটিকে ঘিরে বৃত্তাকারে তৈরি।এই রাস্তায় দৌঁড়ালেই সকালের জগিং হয়ে যায়।
যান্ত্রিক মহানগরের স্বভাবসুলভ ব্যস্ততা থেকে সাময়িক মুক্তি নিতে দুসাই রিসোর্টের মায়াবী সবুজবীথি আর নির্জনতা প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের জন্য অবকাশযাপন কেন্দ্র।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান:
1.লাউয়াছড়া উদ্যা
2. মাধবপুর লেক
3. চা বাগান
4.বাইক্কার বিল
5.চা রিসোর্ট ও জাদুঘর
6. হামহাম ঝর্ণা
7. নীলকণ্ঠের সাত রঙের চা
8. লাসুবন গিরিখাদ
9.সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা
10.বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ
11.রাবার বাগান
12.স্বর্ণালী ছড়া
13.মণিপুরি পল্লী
14.পরিকুন্ড জলপ্রপাত
15. পাথারিয়া পাহাড়
16.মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত
17.হাইল হাওড়
১। ঢাকা থেকে সিলেটে আকাশপথে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লাগবে।সিলেট থেকে রিসোর্টের গাড়িতে করে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার যেতে প্রায় দুই থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগবে।
২। সড়কপথে দুসাই রিসোর্টে পৌছাতে প্রায় তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগবে।
৩.ঢাকা থেকে ট্রেনে শ্রীমঙ্গল স্টেশন।শ্রীমঙ্গল স্টেশনে পৌছার পর রিসোর্টের নিজস্ব গাড়িতে প্রায় ১৫ কিলোমিটার যেতে ঘণ্টা খানেক সময় লাগবে।
আবাসন ব্যয়(সময়, উৎসব বা বিভিন্ন কারনে কম বেশী হতে পারে।সাময়িক ধারনা পাওয়ার জন্য ভাড়া উল্লেখ করলাম ):
সুপিরিয়র কিং ভিলা- 12000টাকা(2 প্রাপ্তবয়স্ক, 1/2 শিশু)
প্রিমিয়াম কিং ভিলা-14000টাকা(2 প্রাপ্তবয়স্ক, 1/2শিশু)
ভিলা ডিলাক্স কুইন- 16500(ক্যাপল)
ভিলা ডিলাক্স কিং-19000(2 প্রাপ্তবয়স্ক, 1 শিশু)
ভিলা সুইট-সি-24000টাকা(2 প্রাপ্তবয়স্ক, 1 শিশু)
ভিলা স্যুট-বি-28800(4 প্রাপ্তবয়স্ক, 1 শিশু)
ভিলা স্যুট-এ-32000টাকা(4 প্রাপ্তবয়স্ক, 1 শিশু)
স্পেশাল 2টি ভিলা:
হানিমুন ভিলা- 50,000 টাকা
প্রেসিডেন্সিয়াল ভিলা- 80,000 টাকা
অন্যান্য সুবিধে:
1.সুইমিং পুল 3 টি স্তরে। প্রথমটিতে জ্যাকুজি পুল, দ্বিতীয় ধাপে রিলাক্সিং পুল এবং শেষে গরম করার সুবিধা সহ ল্যাপ পুল
2. বিষয়ভিত্তিক রেস্তোরাঁ(বানানা লীফ রেস্টুরেন্ট, টি ভ্যালী রেস্টুরেন্ট, ভ্যালী ক্যাফে এন্ড বার লাউঞ্জ, এবং শীষা লাউঞ্জ)
3.56 আসনের সিনেপ্লেক্স
4.ওপেন এয়ার অ্যাম্ফিথিয়েটার
5.শিশুদের নার্সারি খেলার মাঠ
6. ক্যানোয়িং সাইক্লিং এবং কোর্ট টেনিস
7.নৌকাভ্রমন করা এবং মাছ ধরার ব্যবস্থা
8. গলফ খেলার ব্যবস্থা।
ভিন্ন কিছু তথ্য:
ওয়ার্ল্ড লাক্সারি হোটেল অ্যাওয়ার্ডস 2016-এর জন্য দুসাই এশিয়ার সেরা বিলাসবহুল ফরেস্ট রিসোর্টে ভূষিত হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের বিলাসবহুল ভ্রমণ গাইড দ্বারা 2016 এর জন্য বাংলাদেশের সেরা বিলাসবহুল রিসোর্ট।
বিশ্বব্যাপী হোটেল এবং রিসর্ট স্বীকৃতি সংস্থা, এটিকে "সেরা বিলাসবহুল রিসোর্ট" হিসেবে ঘোষণা করেছে।
0 মন্তব্যসমূহ