up

#কফি

 



জোনাথন সুইফট বলেছেন, কফি আমাদের তীব্র, শান্ত এবং দার্শনিক করে তোলে। তবে আমি ভারি ভারি কথা কম বুঝি,আমি শুধু জানি আমি একজন কফি লাভার, যে কফির নাম শুনলেই কফির গন্ধ পায়😂।


মানুষের এই কফি প্রেমের ইতিহাস কিন্তু বহু বছরের পুরানো।প্রায় ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষ কফি পান করছে।আমার জানা মতে,পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কফি পানের প্রমাণ পাওয়া যায় পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইথিওপিয়ায়।

ইথিওপিয়া থেকেই আরব ব্যবসায়ীরা ৮৫০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম কফি বীজ রপ্তানী করে।জানা যায়, ১৪৭৫ খ্রিস্টাব্দে তুরস্কে পৃথিবীর প্রথম কফিসপ হয়।আর ১৬১৫সালে ইউরোপে ভেনিসের ব্যবসায়ীদের হাত ধরে কফির ব্যবসা শুরু হয় এবং ১৬২৩ সালে ভেনিসেই ইউরোপের প্রথম কফি হাউস হয়। ১৬১৬ সালে ডাচরা কফি নিয়ে যায় হল্যান্ডে।১৬৬৮ সালে আমেরিকায় প্রথম কফিসপ।ইংল্যান্ডের প্রথম কফিহাউস অক্সফোর্ডে গড়ে ওঠে।তারপর ধীরেধীরে সারা পৃথিবীর মানুষ এর প্রেমে আসক্ত হয়।এরপর  কফি ঘরোয়া পরিবেশের পরিধি ডিঙিয়ে বাণিজ্যিক পরিবেশে প্রবেশ করে এবং অবশেষে শিল্পের রূপ লাভ করে।


বর্তমানে কফি উৎপাদনে শীর্ষ দেশ হলো ব্রাজিল, এবং ইথিওপিয়া থেকে কফি পানের যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে আমেরিকানরা কফির সবচেয়ে বড় ভোক্তা।মার্কিনিরা প্রতি বছর গড়ে ১১০ বিলিয়ন কফি খায় ।


বাংলাদেশে প্রথম কবে কফির প্রচলন শুরু হয় তা জানা যায়নি, ধারনা করা হয় ব্রিটিশদের হাত ধরে যাত্রা শুরু হয়েছে।তবে কফিসপের জনপ্রিয়তার বর্তমান অবস্থার সূচনা হয় ২০০৫ সালে, যখন দক্ষিণ এশিয়ার একটি কফির ব্র্যান্ড ঢাকায় আসে।নগরবাসীর কাছে ইতালীয় প্রযুক্তিতে উচ্চ চাপে কফির গুঁড়ায় গরম পানি ও দুধ দিয়ে তৈরি এস্প্রেসো ছিল নতুন অভিজ্ঞতা।তারপর কর্মব্যস্ত ঢাকা শহরে একটুখানি অবসর বা বিনোদনের জন্য বা প্রিয়জনের সাথে নিরিবিলিতে সুন্দর কিছু মূহুর্ত, বন্ধুদের সাথে আড্ডা অথবা মন ভাল করার সঙ্গী করে ফেলেছে কফিকে।তাই মানুষের চাহিদা এবং আগ্রেহের কারনে কফির বাণিজ্যিক অবস্থা  বর্তমান রূপ লাভ করেছে। বর্তমানে ঢাকায় ৭০টির বেশি আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রিমিয়াম কফি আউটলেট আছে। 


ঢাকার কফিসপ গুলোর মধ্যে বারিস্তা লাভাজ্জা ,রেম ডে লা ক্রেম, সুগার অ্যান্ড কো, বিনস অ্যান্ড অ্যারোমা, নর্থ এন্ড কফি রোস্টার্স, গ্লোরিয়া জিন’স কফি, ব্রোনিয়া ক্যাফে অ্যান্ড গ্যালারী, জর্জ’স ক্যাফে, কফি বার জনপ্রিয়।এই কফিশপগুলো শুধু কফিতেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বৈচিত্র্য হিসেবে যোগ হয় নানা মুখরোচক খাবারও। এসব জায়গায় বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা দেয়া ছাড়াও পরিবার নিয়েও যেন সময় কাটানো যায় সেভাবেই ডেকোরেশন করা থাকে। আর তার সাথে যদি যোগ হয় লাইভ মিউজিক বা ভিন্ন কিছু, তাহলে তো কথাই নেই। কিছু শপ আবার মধ্যরাত পর্যন্ত খোলা থাকে।


পৃথিবীর সেরা কফিসপের তালিকায় প্রথম দিকে আছে, ‘টাল্লিস কফি, ডানকিন ডোনাটস,কফি বিনারি,কোস্টা কফি,ক্যারিবু কফি, স্টারবাকস, ম্যাকক্যাফে, লাভাজা কফি, গ্লোরিয়া জিন্স কফি, টিম হরটন।এছাড়া আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের ক্যাফে কফি ডে পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে শাখা খুলে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।


যে কফি নিয়ে এত আয়োজন বা হৈ চৈ সেই কফি কিন্তু আমাদের টেবিলে উঠে আসে একজন কফি চাষির অক্লান্ত পরিশ্রমে,যা সবার অগোচর থেকে যায়।এটি আমি অনুধাবন করেছি ইন্দোনেশিয়ার বালির একটা কফি বাগান সহ ফ্যাক্টরিতে গিয়ে।সেখানে প্রথম আমি কফি গাছ এবং তৈরি প্রক্রিয়া দেখলাম।


কফি চিরসবুজ এবং বহুবর্ষজীবী একটি গাছ। কফিগাছ লাগানোর দুই থেকে চার বছরের মধ্যে কফি পাওয়া যায়।গাছ 9/10 মিটার হয়।কফি ফুল সাদা এবং মিষ্টি গন্ধ যুক্ত।কফি প্রথমে গাঢ় সবুজ রংয়ের হয়, পরিণত হলে লাল হয়।আমি পাহাড়ের ঢালবেয়ে নীচে নেমে গেছি কফি বাগানের অনেক ভিতরে।জীবনে প্রথম বার গাছে কফি ছুঁয়ে দেখবো বলে। কফি দেখতে আসলে একধরণের চেরি ফলের মতো,শুধু আকারে একটু ছোট।কফির উৎপাদন নির্ভর করে কফির জাতের ওপর এবং আবহাওয়া ও সিজনের ওপর।


কফি কেনার সময় সবচেয়ে দামী কফির নাম লুওয়াক বললে আমার এই কফি তৈরির প্রক্রিয়া মনে পড়লো। সিভেট' নামের স্তন্যপায়ী বিড়ালের বিষ্ঠা থেকে তৈরি পৃথিবীর সবচেয়ে দামী এই কফি।আমি পড়েছি,কফি বিনস বিড়ালের পেটে যাওয়ার পরফারমেন্টেশন হয় এবং রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে।আর বিড়ালের পাকস্থলীর মধ্যেকার এনজাইম কফি বিনের সঙ্গে মিশে যায়।ফলে অসাধারণ সুগন্ধযুক্ত ও সুস্বাদু কফি পাওয়া যায় তা থেকে।এই কফির খুচরা দাম এক কিলো ৫৫০ ইউরো বা ৭০০ মার্কিনডলার। প্রতি কাপ কফির দাম ৩৫ থেকে ৮০ মার্কিন ডলার, অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬৫০০ টাকা।তবে দাম নয় প্রক্রিয়াগত কারনে এই কফিতে আমার আগ্রহ নেই।


ক্যাফের পরিবেশ এমন হয় যে আপনি সেখানে একা বসে থাকলেও একাকিত্বের বোধ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারবেন। বিশ্বের সব বড় শহরে কফি ঘিরে গড়ে উঠছে এ ধরনের কফি সংস্কৃতি। আমাদের দেশের শহরগুলো বিশেষ করে ঢাকা এখন তার বাইরে নয়।একটি কফিহাউসের নিয়মিত সদস্যদের কাছে  একটি অনানুষ্ঠানিক ক্লাব হয়ে উঠে। একটি সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, কফিহাউসগুলি মূলত সামাজিক যোগাযোগের কেন্দ্র হিসাবে কাজ করে।কারন কফিহাউসগুলি জনপ্রিয় মিলনস্থল হয়ে উঠেছে যেখানে লোকেরা কফি পান করে না, কথা বলে,গল্প এবং গান শুনতে এবং রাজনীতি নিয়ে আলোচনাও করে।তাই   কফিসপকে অনেকে "জ্ঞানের স্কুলও' বলে।


এভাবে কফি আমাদের  সামাজিক জীবনের অংশ হয়ে জীবনকে রিএনার্জাইজড করে বলে কফিকে বলা হয় ‘সোশ্যাল লুব্রিক্যান্ট’।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ads Inside every post