up

#কালমেঘা রিসোর্ট(কালমেঘা কান্ট্রি ক্লাব ও রিসোর্ট)


 কে কবে ঢাকের বাজনা শুনেছেন? এ প্রশ্নে কেউ কেউ বলবে হয়তো পূজায় শুনেছে, কেউ বলবে কারো বিয়েতে শুনেছে।কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয়, তার নিজের জন্য শেষ কবে ঢাক বাজানো হয়েছে।তবে খুব কম মানুষ স্মৃতির জানালায় উঁকিঝুঁকি দিয়ে নিজের বিয়ের অনুষ্ঠান ছাড়া কোন স্মৃতি  মনে করতে পারবে বলে মনে হয় না।সেদিক থেকে আমি ভাগ্যবান,আমি মালাক্কা পোর্ট নামার পর ঢাকির দল এসে অভ্যর্থনা জানায়।আর এবার কালমেঘ রিসোর্টে এসে সেই সুখানুভূতি আবার হলো।বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রিসোর্ট গুলোতে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানোর সুন্দর সুন্দর রীতি দেখা যায়।কিন্তু বাংলাদেশে এসব কালচার এখনো সেইভাবে প্রচলিত হয়নি।তাই কালমেঘ রিসোর্টের অভ্যর্থনা  আমাদের বেশ বিস্মিত করেছে।




আমাদের গাড়ী ঢাকিকে অনুসরণ করে এসে থামল রিসিপশানে।এখনো পুরো রিসোর্ট সার্ভিসের জন্য তৈরি হয়নি।তাই রিসোর্টের রিসিপশান বলতে যেমন হয়, তেমন কিছুনা।সাধারণ ভাবে সাজানো একটা রুম।তবে তাদের আতিথেয়তার প্রশংসা করতে হবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে।

আমরা আনুষ্ঠানিকতা সেরে হেঁটে রুমের দিকে পা বাড়াতে লক্ষ করলাম যদিও রিসোর্টটা এখনো আন্ডার কন্সট্রাকসানে আছে তবুও মৌসুমি ফুল গাছ দিয়ে যথাসাধ্য গোছানোর চেষ্টা করেছে।অভ্যর্থনা কর্মী বললো 17 একর জমিতে শুরু করলেও এখন জায়গা বাড়াচ্ছে।রিসোর্টের ভিলাগুলোর চমৎকার স্থাপত্যরীতি বেশ দৃষ্টিনন্দন। ভিলার ভিতরের গাছগাছালি ঘেরা ব্যক্তিগত সুইমিং পুল তো অবকাশকে করে তুলেছে  আরো আভিজাত্যময়।এছাড়া জাকুজিতে গা ভিজিয়ে বই পড়ার আনন্দের অংশ  না বললে নয়।

দোতলা ভিলার নীচের অংশে লিভিং রুম আর ড্রাইনিং রুম। উপরে তিন বেড রুম।মানে ছয়জনের থাকার ব্যবস্থা।এছাড়াও কেউ চাইলে নীচের খোলামেলা লিভিং রুমে আরো দুজনের থাকার ব্যবস্থা তারা করে দেয় বাড়তি একটা চার্জের বিনিময়ে।আমার কাছে সবচেয়ে রিসোর্টের সবচেয়ে ব্যতিক্রম এবং সুবিধেজনক সেবা যেটা মনে হয়েছে, সেটা হলো দুজন কর্মী প্রতিটি ভিলায় সার্বক্ষণিক অবস্থান।এই ব্যতিক্রমী আতিথেয়তা আমি কোথাও পাইনি দেশ বা বিদেশে।সার্বক্ষণিক কর্মী থাকায় যখনতখন চা, কফি বা কোন স্নেকস খাওয়া যায়।আর তারাও অতিথিদের সাথে না থেকে তারা কিচেনের দিকটায় থাকে।এতে বাহিরের লোক থাকায় প্রাইভেসির ইস্যু নেই।তারা রাতের ১০ পর্যন্ত থাকে।

অতিথিদের সময় কাটানোর জন্য কেরাম বোর্ড আছে।এছাড়া রিসোর্টের ভিতর খোলা অনেক জায়গা আছে টেনিস বা ব্যাডমিন্টন বা ফুটবল খেলার জন্য।খেলাধুলার পরিসর থাকায় অনেকে বাচ্চাদের সাথে এখানে কোয়ালিটি সময় কাটানোর জন্য আসে।

রাতে বারবিকিউ করার ব্যবস্থা আছে ভিলার বাহির দিয়ে।অনেকে বারবিকিউ খুব উপভোগ করে যদিও আমি অতটা না।তবে বারবিকিউকে কেন্দ্র করে মিউজিক বা হৈচৈ ভালোই লাগে☺️।

রিসোর্টের ভিতরে একটা পদ্ম পুকুর আছে।পাড় বাঁধানো পদ্ম পুকুরটা রিসোর্টকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে।


ঢাকা থেকে গাড়িতে  2 ঘন্টার দুরত্বে ব্যতিক্রমী এবং আধুনিক সুবিধেসহ গ্রামের নিজের বাড়ীর মতো অবকাশ কাটানোর জন্য কালমেঘা কান্ট্রি ক্লাব এবং রিসোর্ট আকর্ষণীয় গন্তব্য আমার মতে।কারন খুব কম সময়ে কম খরচে আর কোন রিসোর্ট আমার জানা মতে নেই।

আমার মতো যাদের মনে গ্রামের বাড়ী নিয়ে নস্টালজি কাজ করে, তাদের জন্য এই রিসোর্ট।আধুনিক সুবিধেও আছে, আবার গ্রামের পরিবেশও আছে, নিরাপত্তা ইস্যুও নেই। যা বর্তমানে আমাদেরকে গ্রামের বাড়ীতে রাত কাটাতে গেলে সবচেয়ে বেশী ভাবায়।তাই কয়েক দিনের জন্য ঢাকার কাছেপিঠের এই গন্তব্য হতে পারে যে কারো পরবর্তী অবকাশের স্থান।


#খরচ:
তিন বেড রুমের ভিলা:৬ জনের জন্য(বড়) ১৭০০০ টাকা 
ছয় বেড রুমের ভিলা: ১৩ জনের জন্য(বড়) ২১০০০ টাকা
ড্রাইভারের থাকা ফ্রি।খারাব দিন প্রতি ২০০০ টাকা।তবে বিশেষ সময়ে এই খরচ কম বেশী হতে পারে।





#ভিলার  সংখ্যা: 
রিসোর্ট কর্মীর ভাষ্যমতে তাদের ১০টা ভিলা অতিথিদের সেবার জন্য তৈরি।কয়েকটা রেডির পথে।ভিলার সংখ্যা কম বলে কোন হলি ডে তে যেতে চাইলে আগেই বুকিং দেয়া উচিৎ হবে।


#খাবার:
ভিন্ন ভিন্ন মেনুর ভিন্ন ভিন্ন দামের খাবারের প্যাকেজ আছে।অনেকটা সেট মেনু টাইপের।যেটা পছন্দ নিতে পারেন। পরিবারের পছন্দ অনুসারের পছন্দ করার সুযোগ আছে। দামও বেশী নয়।

বাসে গাজীপুরের শ্রীপুর নেমে অটো নিয়ে তালিপাবাদ কালমেঘা বাজার হয়ে যাওয়া যায় কালমেঘ রিসোর্টে।সবচেয়ে সুবিধেজনক হলো ব্যক্তিগত গাড়ী নিয়ে যাওয়া।তাতে পুরো রাস্তার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।সবাই তাই গাড়ী নিয়েই রিসোর্টে যায়।

#রিসোর্টের আন্তর্জাতিক অর্জন:
মর্যাদাপূর্ণ এশিয়া প্যাসিফিক প্রপার্টি অ্যাওয়ার্ডের বিজয়ী।

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ads Inside every post