আমার মতো যাদের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা গ্রামে তারা জীবনের প্রয়োজনে শহরের জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেলেও আমাদের আত্মিক টান অনুভব করি গ্রামের স্নিগ্ধ সজীব প্রকৃতির।ছায়াঘেরা সবুজে জড়ানো প্রকৃতি, পাখির কিচিরমিচির,মোরগ ডাকা ভোর,সবুজাভ পুকুরের জল বা টিনের চালে বৃষ্টির নূপুর ধ্বনি মতো আনন্দময় ও মুহূর্তগুলো সুখানুভূতি হিসেবে সবসময় হৃদয়ে ধারন করে রাখি।তাই তো ঘুমের জন্যও স্লিপিং মিউজিক হিসেবে টিনের চালের বৃষ্টির শব্দকেই বেছে নিতে ভালো লাগে। আমি জানি এটা শুধু আমি না, অনেকেই করে।
জল ও জঙ্গলের কাব্য রিসোর্টে সেই গ্রামীণ জীবনে আবেশ সৃষ্টি করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৭৫ বিঘা নিজস্ব জমির উপর রিসোর্টটি গড়ে উঠলেও খোলা দিগন্ত ও প্রাকৃতিক বিল পাশে থাকায় রিসোর্টের পরিধি ছোট না বড় সেই হিসেবের বাহিরে চলে গেছে। প্রাকৃতিক পরিবেশকে নষ্ট না করে আধুনিক বা প্রযুক্তিগত সুবিধেসহ পরিবেশবান্ধব স্থাপনা নির্মাণের চমৎকার উদাহরণ জল ও জঙ্গলের কাব্য রিসোর্ট।এখানে ঘরগুলোর ছনের ছাউনি, বাঁশ আর পাটের বেড়া সব মিলেয়ে একটা গ্রামীণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে এই রিসোর্টে।
রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ ১০-১২টা শেড তৈরি করেছে রিসোর্টের বিভিন্ন জায়গায়।এগুলোর আবার সুন্দর সুন্দর নাম দেয়া হয়েছে।যেমন বকুল তলা, বট তলা,হিজল তলা..।একপাশে বড়সড় রান্নাঘর।মোটামুটি খোলামেলা এই রান্নাঘরে অতিথিদের জন্য নিজস্ব জমির সবজী,জমির ধানের চাল,চালের রুটি, চিতই পিঠা,দুধ চা সহ নানান গ্রামীণ খাবারের আয়োজন চলে। রিসোর্টের অতিথিদের গ্রামীণ পরিবেশ আর খাবারের সাথে সুব যোগ করে আনন্দকে বাড়িয়ে দিতে ব্যবস্থা করা হয় গানের।গানেরদল তাদের ঢাক আর দো-তারার সুরে জনপ্রিয় সব লোকসঙ্গীত শুনিয়ে অতিথিদের নিয়ে যায় অতীত গ্রামীণ জনপদে।
আড্ডাবাজ বাঙালীর আড্ডা যে চা ছাড়া চলে না,তা রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের মাথায় আছে। তাই একদিকে বেশ বড় জায়গা নিয়ে তৈরি করেছে চা-ঘর।সেখানের কর্মীরা হাসিমুখে চা পরিবেশন করে চা-ঘরের পাশেই ব্যবস্থা করা আড্ডাখানায়।অতিথিরা চায়ের কাপে ঝড় তোলে বিচিত্র কত বিষয়ে।
অতিথিদের রিসোর্টের পাশের বিলে ঘুবে বেড়ানোর জন্য নৌকার ব্যবস্থা আছে।ইচ্ছা হলে যে কেউ একটু বিকালের বাতাস আর মৃদু ঢেউের সাথে সখ্যতা করে নিতে পারে অনাহাসে।
রিসোর্টে কর্মী স্বল্পতা থাকা সর্তেও কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার অভাব নেই।অতিথিদের সেবা দেয়ার মানসিকতা আছে রিসোর্টের প্রতিটি মানুষের যেটা আমার ভালো লেগেছে।
খরচ:
জল ও জঙ্গলের কাব্য রিসোর্টে বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ রয়েছে অতিথিদের সুবিধার্থে।কেউ কেউ ডে ট্যুর করতে পছন্দ করে, কেউ আবার নাইট স্টে করতে।তাই প্যাকেজগুলো সেভাবে সাজানো হয়েছে। সাধারণত ১৫০০ থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকার মধ্যে প্যাকেজগুলো করা হয়েছে।
জনপ্রতি ৩০০০ টাকা( নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার)
শিশু ৬০০টাকা(নাস্তা,দুপুর ও রাতের খাবার)
কাজের লোক ও ড্রাইভারের জন্য ৬০০টাকা।
সারাদিনের জন্য যারা যেতে চায় তাদের জন্য জনপ্রতি ১৫০০ টাকার প্যাকেজ(সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার ও বিকালের স্ন্যাক্স)
কারো কারো কাছে খরচটা একটু বেশী মনে হয়। তবে আমার কাছে সেবার এবং খাবারের মানের সাথে তুলনা করলে বেশী মনে হয় না।
#আরো পড়ুন https://www.prithibirpathe.com/2022/06/blog-post_26.html
কিভাবে যাবেন:
বাস অথবা অন্য কোনো যানবাহনে করে পুবাইল কলেজ গেট এলাকায় নেমে সেখান থেকে রিকশা বা অটো করে যাওয়া যায় জল ও জঙ্গলের কাব্য রিসোর্টে।সবচেয়ে সুবিধেজনক হলো ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যাওয়া।পুবাইল কলেজ গেট এলাকা থেকে এই রিসোর্টটির দূরত্ব মাত্র ৩ কিলোমিটার।
আমাদের মনোজগতে গেঁথে রাখা গ্রামীণ জীবনের সাদামাটা ঘর,নিরিবিলি পরিবেশ,গ্রামীণ খাবার,জীবনের গল্পগাথা গাওয়া গানের নিখাদ সুর সব কিছুর আমেজ পাওয়া যায় জল জঙ্গলে কাব্য রিসোর্টে।অতিথিদের গ্রামীণ জীবনের সংস্পর্শে আনার প্রয়াসেই রিসোর্টের নামের সার্থকতা।জীবন-জীবিকার তাগিদে গ্রামীণ জীবনের পাট চুকিয়ে যারা আমরা নগরবাসী হয়ে ডেরা বেঁধেছি নগরে, কিন্তু অন্তরে এখনো অটুট রয়েছে গ্রামীণ জনপদের অম্ল-মধুর স্মৃতি তাদের জন্য উপযুক্ত এই রিসোর্ট।
0 মন্তব্যসমূহ