সাধারণত বাঙালীরা সেই জাতি যারা দেশে বসে বিদেশি খাবার খোঁজে,কিন্তু বিদেশে ঘুরতে গিয়ে বাঙ্গালী হোটেল খোঁজে😂।অবশ্য কেউ কেউ ধর্মীয় রীতিনীতির কারণে বিদেশে গেলে বাঙালি রেস্টুরেন্টে খেতে পছন্দ করে।তবে যাই হোক বিভিন্ন দেশের মানুষদের বিভিন্ন ধরনের খাবার এবং কোন কোন দেশের কিছু কিছু খাবারকে অদ্ভুত মনে হলেও আপনি ট্র্যাভেলার হলে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর খাদ্যাভ্যাসের তারিফ আপনাকে করতে হবেই !
বিভিন্ন খাবারের স্বাদ, রান্নার ধরণে পার্থক্য থাকে।তেমনি প্রতিটি দেশেই রয়েছে নিজস্ব ধাঁচের জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী খাবার।যারা খাদ্য রসিক তাদের কাছে ভ্রমণে একটা বিশেষ মাত্রা যোগ করে সেই দেশের খাবার।আমি খাদ্য রসিক নই।আমি জীবন ধরনের জন্য খাই, তাই কোথাও বেড়াতে গেলে আমি নতুন নতুন খাবার চেখে দেখার সাহস করি না।তবে আমি সৌন্দর্য প্রিয় মানুষ খাবারের নান্দনিক পরিবেশন আমাকে আনন্দিত করে।খাদ্যের আনুষ্ঠানিক উপস্থাপনা থাই সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।তারা প্লেটে নানারকম সবজি ও ফল,ফুল দিয়ে সাজিয়ে খাবার পরিবেশন করে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রাষ্ট্র থাইল্যান্ডে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে তাদের সংস্কৃতিতে যেমন ভারত, চীন, মায়ানমারের সংস্কৃতির প্রভাব পড়েছে, তেমনি খাবার বা রান্নার কৌশলেও
প্রতিবেশী, বিশেষ করে ভারত, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, বার্মা, ভিয়েতনাম এবং ইন্দোনেশিয়ার খাবারের ঐতিহ্য এবং রান্না পদ্ধতি বহু শতাব্দী ধরে থাইল্যান্ডকে প্রভাবিত করেছে।বিশেষ করে লাওস, মায়ানমার এবং কম্বোডিয়ার প্রভাব বেশি।আধুনিক থাই রান্নায় ইউরোপীয় এবং চীন ও জাপানি স্বাদের ছোঁয়া যোগ হয়েছে, তবে দামী রেস্তোরাঁর খাবারে সহজে বিভিন্ন মশলা এবং প্রয়োজনীয় বিদেশী ভেষজের মিশ্রণে অন্যন্য খাবার তৈরি হয়।
ঐতিহ্যবাহী থাই রান্নাকে চার ভাগ করা হয়:
টম (সিদ্ধ খাবার),
ইয়াম (মশলাদার সালাদ),
ট্যাম (পাউন্ডেড খাবার)
গায়েং (তরকারি)।
ডিপ-ফ্রাই, স্টির-ফ্রাই এবং স্টিমড ডিশগুলি চাইনিজ খাবারের অংশ।
পৃথিবীর উন্নত, উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত সব দেশেই বর্তমানে স্ট্রিটফুডে টুরিস্টদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে।বিশেষ করে ইয়াং ট্র্যাভেলারা তো এখন প্রথাগত সাজানো গোছানো রেস্তোরাঁর চেয়ে খোলা পরিবেশে বৈচিত্র্যময় আয়োজনে বেশি আকর্ষিত হয়। স্ট্রিটফুডই সেই চাহিদা মিটাতে পারে।সেই দিক থেকে থাইল্যান্ড সবার আগে। থাইল্যান্ডের রাস্তার খাবারের মান এবং পছন্দ বিশ্বখ্যাত।এছাড়াও স্বাদ, গন্ধ ও বৈচিত্র্যে অনন্য।
থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় স্ট্রিটফুড আইটেম হল প্যাডথাই, পাপায়্যা-সালাদ, টম-ইয়াম-স্যুপ, স্টিকি-রাইস-ম্যাংগো এবং বিভিন্ন ধরনের থাইকারি।এছাড়াও ফল ও বিভিন্ন ধরনের পানীয়ের আয়োজন তো থাকেই।স্বাদ, গন্ধ ও বৈচিত্র্যে অনন্য হওয়ায়
ব্যাংকক শহরের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ এ স্ট্রিটফুডের ওপর নির্ভরশীল।বিশেষ করে সন্ধ্যার পর ট্যুরিস্টদের ভিড় লেগেই দোকান গুলোতে, স্ট্রিটফুডের স্বাদ নেয়ার জন্য।এককথায় রাস্তার পাশের খাবারের সারিবদ্ধ স্টলগুলির পাশ দিয়ে হাঁটার সময় খাবারের গন্ধে পথচারীর ইন্দ্রিয়ে একটি আনন্দদায়ক উত্তেজনা তৈরি করে, যা পথচারীকে থামতে, দেখতে এবং স্বাদ নিতে বাধ্য করে।তাই তো ব্যাংকককে অনেকেই বিশ্বের সেরা স্ট্রিট ফুড শহর বলে। এমনকি কেউ কেউ বিশ্বের স্ট্রিট ফুড ক্যাপিটালও বলে।এছাড়া ভার্চুয়াল ট্যুরিস্ট ওয়েবসাইট তো এককাঠি এগিয়ে বলে: "পৃথিবীর খুব কম জায়গা আছে, যা থাইল্যান্ডের মতো স্ট্রিট ফুডের সমকক্ষ হত।"
আথিতেয়তা,খরচ,সৌন্দর্য, নিরাপত্তার কারণে টুরিস্টদের কাছে এশিয়ার সবচেয়ে সস্তা এবং আকর্ষণীয় গন্তব্যগুলোর অন্যতম দেশ থাইল্যান্ড।থাইল্যান্ডে প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ বিদেশি পর্যটক ভিজিট করে।এই বিপুল সংখ্যক টুরিস্টের বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে থাই খাবারে।তাই তো 2017 সালে, সিএনএন ট্রাভেলের বিশ্বব্যাপী 35,000 জন মানুষের অনলাইন পোল "বিশ্বের 50 সেরা খাবারের" তালিকায় সাতটি থাই খাবারের নাম এসেছে।টপ ৫০ খাবারের তালিকায় অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে থাইল্যান্ডের খাবার বেশি।নাম গুলো হলো- টম ইয়াম গুং (৪র্থ), প্যাড থাই (৫ম), সোম ট্যাম (৬ষ্ঠ), মাসামান কারি (১০ম), গ্রিন কারি (১৯তম), থাই ফ্রাইড রাইস (২৪তম) এবং নাম টোক মু (৩৬তম)।
পরিশেষে বলবো আপনি যদি খাদ্য রসিক হন,নতুন খাবার চেখে দেখার সাহস ও সুযোগ হয় তবে তাহলে থাইল্যান্ডে গেলে নীচের খাবার গুলোর স্বাদ নিতে পারেন।স্কুইডের স্যুপ,থাই স্পেশাল পাইনাপেল ফ্রারাই রাইস এবং ম্যংগো রাইস।
0 মন্তব্যসমূহ