up

#থাইল্যান্ড ভ্রমণের খুটিনাটি


 একটু লম্বা ছুটি পেলে বাংলাদেশী টুরিস্টদের কাছে এখন জনপ্রিয় গন্তব্য থাইল্যান্ড।আথিতেয়তা,খরচ,সৌন্দর্য, নিরাপত্তা সবদিক বিবেচনা করলে এশিয়ার সবচেয়ে সস্তা এবং আকর্ষণীয় গন্তব্যগুলোর অন্যতম দেশ থাইল্যান্ড।দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ড সাদা হাতির দেশ নামেই অতি সুপরিচিত। 

থাইল্যান্ডের ঐতিহাসিক নাম শ্যামদেশ এবং দাফতরিক নাম থাই রাজ্য বর্তমানে দেশটির নাম  থাইল্যান্ড।যার অর্থ  মুক্তভূমি বা শান্তিরদেশ।এই নামের পেছনেও কারণ আছে,থাইল্যান্ড একমাত্র দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রাষ্ট্র যা যুদ্ধের সময় ছাড়া কখনও কোনো বিদেশি শক্তির নিয়ন্ত্রণে ছিল না।তাই তাদের সংস্কৃতিতে চাপিয়ে দেয়া কোন নেই, সম্পূর্ণ নিজস্ব সংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ।তবে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এর সংস্কৃতিতে ভারত, চীন, মায়ানমারের সংস্কৃতির কিছুটা প্রভাব পড়েছে।থাই নাগরিকদের আতিথেয়তা এবং হাসি মুখে হাত জোড় করে অভিবাদনের রীতি দেখলে মনে হয় দেশটির "হাসির দেশ" ডাকনামটি যথার্থ। তাই তো দেশটিতে প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ বিদেশি পর্যটক ভিজিট করে।


যেভাবে যাবেন
:
থাইল্যান্ডের ভিসা প্রসেসিং খুব একটা জটিল না হলেও দুঃখজনক বিষয় হলো বাংলাদেশীদের জন্য থাইল্যান্ড ভিসা পাওয়া অতটা সহজ নয়।তবে নিয়ম মেনে এবং কাগজপত্র ঠিক থাকলে ভিসা পাওয়া সহজ হয়।টুরিস্ট ভিসা ফী ৩৭৪০ টাকা।যদি এজেন্ট দিয়ে করান তাহলে বাড়তি ৫০০/১০০০টাকা লাগে।ভিসা প্রসেসিং এ প্রায় ১৫-২৫ দিন লেগে যায়।কেউ নিজে আবেদন করতে চাইলে ভিএফএস-এর ওয়েবসাইট থেকে থাইল্যান্ড এর ভিসা আবেদনের ফরম নামিয়ে আবেদন করতে পারে। ভিসার আবেদন জমা দেওয়ার জন্য গুলশানের স্টার সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় থাইল্যান্ডের অ্যাম্বাসি রয়েছে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ছয় মাস থাকতে হবে।যথাযথ ভাবে পূরণকৃত থাই ভিসা ফরম।জাতীয় পরিচয়পত্রের দুই কপি ফটোকপি।রিসেন্ট তোলা পাসপোর্ট সাইজের চার কপি ছবি।এ ছাড়া ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট,যাতে কমপক্ষে ৭০থেকে ৮০ হাজার টাকা আছে।পেশাগত ডকুমেন্টস(ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স,টিন সার্টিফিকেট, চাকুরী জীবির ক্ষেত্রে এন,ও,সি,ছাত্রছাত্রী হলে স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আই ডি)।বিমান টিকেটের কপি।হোটেল বুকিং এর কপি ইত্যাদি। 

ব্যাংককের দর্শনীয় স্থান:
১. গ্র্যান্ড প্যালেস
২. ওয়াট অরুণ
৩. সাফারি পার্ক
৪. ওয়াট ফ্রা কাইয়ো
৫. ওয়াট ফো
৬. ফ্লোটিন মার্কেট
৭. ব্যাংকক জাদুঘর 
৮. শিয়াম ওসেন ওয়ার্ল্ড বা সী লাইফ ব্যাংকক ওসেন ওয়ার্ল্ড
৯.লুম্বিনী পার্ক
১০. চাও ফ্রায়া নদী
১১. খাও সান রোড ইত্যাদি।

কেনাকাটা:
থাইল্যান্ডকে বলা হয় কেনাকাটার স্বর্গ।এখানে যে কোন বাজেটের টুরিস্ট কেনাকাটা করতে পারে।ব্যাংকক  সিটিতে সেন্টাল মার্কেটর মতো দামী মার্কেট আছে, যেখানে বিশ্বের সব নামকরা ব্যান্ডের আউটলেট আছে, পাশাপাশি এম বি কে এর মতো মধ্যবিত্তের মার্কেটও আছে।তবে মোটামুটি মানের জিনিস কিনতে হলে আমার সাজেশন রবিনসন মার্কেট বেষ্ট।রাতের ব্যাংককের জীবন ও সৌন্দর্য দুটোই আলাদা।এ সিটিতে রাতের বেলায় টুরিস্টদের পদচারণায় চঞ্চল হয়ে উঠে।টুরিস্ট ফেন্ডলী বিশেষ করে ওমেন্স ফেন্ডলী এই শহরটিতে টুরিস্ট এমন ভাবে ঘোরাফেরা মনে হয় তার নিজের শহর।

কোথায় খাবেন:
ব্যাংককের নামকরা সব ফুড চেইনসপের আউটলেট আছে।এখানে পাঁচ তারকা মানের হোটেলর পাশাপাশি স্টিট ফুডের দোকানও মিলবে।ব্যাংককের স্ট্রিট ফুডের সুনাম আছে অনেক।খাবারের দাম, বৈচিত্র্য ও ফুড ডেকারেশনের জন্য এই সুনাম।ব্যাংককের জনপ্রিয় খাবার গুলো হল- চিংড়ি, জায়ান্ট কাবাবব, হাঁস, বিফ ও সামুদ্রিক মাছের আইটেম।এসবের পাশাপাশি মেন্যুতে পাবনে ব্যাঙ, ঝিনুক, শামুক, বেবি অক্টোপাস, কাঁকড়া, সাপ, ফড়িংও।তবে ব্যাংকক বেশ কিছু বাংলা খাবারের হোটেলও রয়েছে।এছাড়া ভারতীয়,চীনা ফুড,পাকিস্তানি ফুড, এরাবিয়ান ফুডের সপও আছে।

থাকার ব্যবস্থা:
প্রযুক্তির এই যুগে কোথাও বেড়াতে গেলে আর থাকার জায়গা নিয়ে ভাবতে হয় না।কারণ হাতের নাগালে আছে মোবাইল মানে বুকিং দেয়ার অনেক ওয়েবসাইট।তবে তারমধ্যে বুকিং ডট কম এবং ট্রিপ এডভাইজারে আমার আস্থা।তাই দেশে বসেই বুকিং দিয়ে যাওয়া ভালো। আমার মতে বাংলাদেশী টুরিস্টের জন্য সুকুমবিত এরিয়ার ১১নং রাস্তা উপযুক্ত।এখানে স্ট্রিট ফুডের সুনাম আছে, হাঁটা দূরত্বে মার্কেট আছে কয়েকটা,হাঁটা দূরত্বে মেট্রোরেল স্টেশন আছে যাতে যোগাযোগ খরচ কমে যায়।

ভ্রমণ টিপস:

1. Wifi Master Key এপস ডাউনলোড করে নিবেন,এতে ফ্রী  WiFi ইউজ সহজ হয়।
2. ফোনে ‘Grab’ এপস ডাউনলোড করে নিবেন।তাহলে যাতায়াতের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে ট্রাক্সি ড্রাইভারের সাথে দরকষাকষি করতে হবে না।ব্যাংককের ট্যাক্সি ডাইভাররা কেউ মিটারে যেতে চায় না।এলোমেলো ভাড়া চায়,যা মূল ভাড়া আশেপাশেও না।
3. বুকিং ডটকম বা ট্রিপ এডভাইজার দিয়ে হোটেল বুকিং দিবেন।
4. দেশের থেকে কিছু বাথ মানে থাই টাকা নিয়ে যাওয়া ভালো। তাহলে এয়ারপোর্টে ডলার বদল করতে হয় না কম দামে।সিটিতে গিয়ে দেখেশুনে এয়ারপোর্টের পোর্টের চেয়ে বেশি দামে ভাঙানো যায়।
5. গুগল ম্যাপ ব্যবহার করুন, এতে রাস্তা হারানোর সমস্যা হবে না।
 6. এয়ারপোর্টে থেকে ট্র্যাভেল সিম নিতে পারেন বিভিন্ন দামের প্যাকেজে।
7. মন্দিরে যেতে হলে ড্রেস কোড মানতে হয়।হাফ প্যান্ট,সর্টস বা খোলামেলা ড্রেস পরে মন্দিরে প্রবেশ করা যাবে না।
8. থাইল্যান্ডে রাজ পরিবারকে খুবই সম্মান করা হয়, তাই  রাস্তায় বা হোটেলে তাদের ছবি বা বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপনকে  ইঙ্গিত করে কিছু বলবেন না।এটা রাজার প্রতি আপনার অপমান বোঝায়।
9. থাইল্যান্ডে Monk খুব শ্রদ্ধা করা হয়।তাদের অনুমতির বাহিরে তাদের ছবি তোলা,তাদের গায়ে হাত দিবেন না, কারণ তারা খুবই ধার্মিক জীবন যাপন করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ads Inside every post